করোনার সময় ডায়াবেটিকরা বেশ ঝুঁকিতে থাকেন। তাঁদের বলা হয় কো-মরবিডিটি। রক্তে চিনি বা শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এতে শুধু করোনা নয়, যেকোনো ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকদের শরীরে রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে; ওষুধের কার্যকারিতাও কমে যায়। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে ডায়াবেটিকদের সমূহ জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য কিছু করণীয় হলো :
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
– করোনাকালীন অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
– সপ্তাহে এক দিন বাসায় গ্লুকোমিটারে ডায়াবেটিসের মাত্রা মাপুন। নাশতার আগে এবং সকাল-দুপুর-রাতে খাবার দুই ঘণ্টা পরে—মোট এই চারবার মাপুন। নাশতার আগে ছয়ের মধ্যে এবং খাবার দুই ঘণ্টা পর আটের মধ্যে থাকলে সবচেয়ে ভালো।
– অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকরা অতি সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে ইনসুলিন নিন, তবু ডায়াবেটিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনুন।
ব্যায়াম
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ব্যায়াম। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং আরো সুফল বয়ে আনে। বর্তমানে বাইরে হাঁটতে যাওয়াটা যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ, সেহেতু ডায়াবেটিকরা বাসার ভেতরেই ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম, সাইক্লিং মেশিন বা ট্রেডমিলে ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করুন। দিনে মাত্র ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যায়ামই যথেষ্ট।
সঠিক মাত্রার ভিটামিন ‘ডি’
জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজমে প্রকাশিত এক গবেষণায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। তিন লাখ ৬৫ হাজার ৫৩০ জনের ওপর সাড়ে ৯ বছর ধরে চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন ‘ডি’-এর মাত্রা ৪৫ থেকে ৬০-এর মধ্যে থাকলে, হার্টের কোনো রোগ, যেকোনো ধরনের ক্যান্সার বা অকালমৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে (২৩ শতাংশ) কমে যায়।
এখন আবার লকডাউনে বাসায় থেকে সূর্যের আলো শরীরে না পড়ায় ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি আরো বেড়ে গেছে। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে ‘ডি’ লেভেল দেখে ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত (নিজে নিজে অবশ্যই নয়)।
জিংক খুব দরকারি
শরীরের ভেতর করোনাভাইরাসের বৃদ্ধি এবং বিস্তার রোধে জিংক খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কোষের ভেতর প্রবেশের জন্য জিংকের অন্য একজন সাহায্যকারী লাগে। যেসব ফলের খোসা লাল সেগুলোতে এই সাহায্যকারী উপাদানটি বেশি থাকে। সুতরাং জিংক ট্যাবলেট, খোসাসহ লাল ফলগুলো প্রতিদিন অল্প হলেও খেতে পারেন।
চাই পর্যাপ্ত ঘুম
রাতে টানা আট ঘণ্টা ঘুম রোগ প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অলস জীবনযাপনের জন্য লকডাউনকালে অনেকের ঘুমের চাহিদা কমে গেছে। অনেকের হয়তো ঘুমের প্যাটার্নও বদলে গেছে; যেমন—গভীর রাত পর্যন্ত জাগা। ডায়াবেটিকদের যেভাবেই হোক এই ঘুমের সাইকেলটি ঠিক করতে হবে।
কিটো ডায়েট পরিহার
২০১৯ সালে আমেরিকার ডড়ত্ষফ জবঢ়ড়ত্ঃ ইবংঃ উরবঃ জধঃরহমং-এ কিটো ডায়েটের স্থান ছিল ৩৮তম। আর নিকৃষ্টতম ডায়েটের স্থান ছিল ৪১তম। অর্থাৎ এটি বিশ্বের চতুর্থ নিকৃষ্ট ডায়েট প্ল্যান। ঞযব খধহপবঃ চঁনষরপ ঐবধষঃয-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কম কার্বোহাইড্রেট (কিটো ডায়েট) এবং বেশি কার্বোহাইড্রেট দুটিই মৃত্যুঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। ৩০ বছর ধরে ১৫ হাজার ২৫৮ জন মানুষের ওপর পরিচালিত গবেষণায় এই ফলাফল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কিটো ডায়েটের বিভিন্ন সাইড এফেক্টের কারণে ডায়াবেটিক, কিডনি রোগী, রক্তচাপের রোগী, হৃদেরাগীসহ যেকোনো ক্রনিক রোগে ভুগতে থাকা রোগীদের কিটো ডায়েট পরিহার করতে বলা হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হলে
– ডায়াবেটিকদের কেউ কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে পানি এবং তরলজাতীয় খাবার বেশি খান।
– বাড়িতে করোনার চিকিৎসা নিলেও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। কেননা চলমান ওষুধগুলো লক্ষণ সাপেক্ষে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় জটিল রোগীদের জীবন বাঁচাতে ইঞ্জেকশনসহ এমন কিছু ওষুধ দিতে হয়, যা ডায়াবেটিসকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তখন ইনসুলিন দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে।